স্বাধীনতা তুমি

স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

অভিশাপ দিচ্ছি

না, আমি আসিনি
ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রাচীন পাতা ফুড়ে,
দুর্বাসাও নই,
তবু আজ এখানে দাঁড়িয়ে এই রক্ত গোধুলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি
আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিল সেটে,
মগজের কোষে কোষে যারা
পুতেছিল আমাদেরই আপনজনের লাশ
দগ্ধ রক্তাপ্লুত,
যারা গনহত্যা
করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে,
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়ে অধিক
পশু সেই সব পশুদের।
ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের
সারিবদ্ধ দাড়
করিয়ে নিমিষে ঝা ঝা বুলেটের বৃষ্টি
ঝরালেই সব চুকে যাবে তা আমি মানিনা।
হত্যাকে উৎসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে
ক্যাম্পাসে বাজারে
বিষাক্ত গ্যাসের মত মৃত্যুর বিভৎস গন্ধ দিয়েছে ছড়িয়ে,
আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করিনা কামনা,
আমাকে করেছে বাধ্য যারা আমার জনক জননীর রক্তে
পা ডুবিয়ে দ্রুতসিড়ি ভেঙ্গে যেতে
ভাসতে নদীতে আর বন বাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে,
অভিশাপ দিচ্ছি সেই খানে দজ্জালদের
অভিশাপ দিচ্ছি ওরা চিরদিন বিশীর্ন গলায়
নিয়ত বেড়াক বয়ে গলিত নাছোড় মৃতদেহ,
অভিশাপ দিচ্ছি
প্রত্যহ দিনের শেষে ওরা
হাটু মুড়ে এক টুকরো শুকনো রুটি চাইবে ব্যাকুল,
কিন্তু রুটি প্রসারিত থাবা থেকে রইবে
দশ হাত দূরে সর্বদাই।
অভিশাপ দিচ্ছি
ওদের তৃষ্ণায় পানপাত্র প্রতিবার
কানায় কানায় রক্তে উঠবে ভরে, যে রক্ত বাংলায়
বইয়ে দিয়েছে ওরা হিংস্র
জোয়ারের মত অভিশাপ দিচ্ছি
আকন্ঠ বিষ্ঠায় ডুবে ওরা অধীর চাইবে ত্রান
অথচ ওদের দিকে কেউ
দেবেনা কখনো ছুড়ে একখণ্ড
দড়ি।
অভিশাপ দিচ্ছি
স্নেহের কাঙ্গাল হয়ে ওরা
ঘুরবে ক্ষ্যাপার মত এপাড়া ওপাড়া
নিজেরই সন্তান
প্রখর ফিরিয়ে নেবে মুখ, পারবেনা
চিনতে কখনো;
অভিশাপ দিচ্ছি এতটুকু আশ্রয়ের জন্যে, বিশ্রামের
কাছে আত্মসমর্পনের জন্যে
দ্বারে দ্বারে ঘুরবে ওরা প্রেতায়িত
সেই সব মুখের ওপর
দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর প্রতিটে কপাট।
অভিশাপ দিচ্ছি।

অভিশাপ দিচ্ছি,
অভিশাপ দিচ্ছি ।